গর্ভাবস্থায় প্রত্যেকটি মেয়েদের যে ১৫ টি খাবার খাদ্য তালিকায় রাখা জরুরী

গর্ভাবস্থায় প্রত্যেকটি মেয়েদের যে ১৫ টি খাবার খাদ্য তালিকায় রাখা জরুরী এই বিষয় নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আপনারা এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় প্রত্যেকটি মেয়েদের খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। 


প্রিয় পাঠক বিস্তারিতভাবে জানতে আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল। 

.

গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবারের নাম গুলো জেনে নিন 

গর্ভাবস্থায় সঠিক খাবার নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সঠিক ও স্বাস্থ্যকর খাবার মা ও গর্ভের শিশু সুস্থতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে থাকে। গর্ভাবস্থায় শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির চাহিদা বেড়ে যায় শুধুমাত্র সঠিক ও স্বাস্থ্যকর খাবারের মাধ্যমে এর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকতে হলে কি খাবেন সেটা জানার পাশাপাশি অবশ্যই কি খাবার খাওয়া ঠিক নয় সেটা জেনে রাখা জরুরী । চলুন গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবারের নাম গুলো জেনে নেই--
  • কাঁচা পেঁপেঃ কাঁচা পেঁপেতে ল্যাটেক্স রয়েছে। ল্যাটেক্স গর্ভপাত ঘটানোর জন্য দায়ী। এটি কেবল পাকস্থলীতে ব্যথায় সৃষ্টি করে না পাশাপাশি গর্ভের সন্তানের ক্ষতিও সৃষ্টি পারে। গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে না খাওয়াই ভালো।
  • অ্যালোভেরাঃ অ্যালোভেরা গর্ভকালীন সময়ে খাওয়া উচিত নয়। অ্যালোভেরার খাদ্য উপাদান গর্ভপাত করতে পারে। পেট পরিষ্কার রাখার জন্য অনেকেই নিয়মিত এলোভেরা জুস খেয়ে থাকেন। তবে মা ও সন্তানের সুস্থ কথা বিবেচনা করে গর্ভাবস্থায় অ্যালোভেরা খাওয়া উচিত।
  • আঙ্গুরঃ শেষের তিন মাসে গর্ভবতী নারীদের আঙ্গুর খাওয়ার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এতে থাকা রেসভেরাট্রল নামক যৌগ হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে। গর্ভকালীন সময়ে আঙ্গুর মা ও শিশুর ক্ষতি করতে পারে কারণ আঙ্গুরে রয়েছে তাপ উৎপাদনকারী উপাদান। তাই আঙ্গুর গর্ভকালীন সময়ে একবারে খাওয়া নিষিদ্ধ।
  • ক্যাফেইন জাতীয় খাবারঃ ক্যাফেইন জাতীয় খাবার শিশুর হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করতে পারে। কম ওজনের শিশুর জন্ম বা গর্ভপাত কারণ হতে পারে। গর্ভাবস্থায় প্রচুর পরিমাণে ক্যাফিন গ্রহণ করলে গর্ভের ভ্রুনের বিকাশ ব্যাহত করে। তাই গর্ভবতী নারীদের প্রতিদিন ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফিন গ্রহণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
  • আনারসঃ আনারস একটি টক মিষ্টি জাতীয় ফল। আনারসে রয়েছে ব্রোমেলাইন নামক উপাদান জরায়ুর পথকে কোমল করে যা প্রারম্ভিক ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে ডায়রিয়া পর্যন্ত হতে পারে।
  • করলাঃ করোলা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও গর্ভাবস্থায় করলা খেলে ক্ষতির কারণ হতে পারে। করলা রয়েছে গ্লাইকোলাইসিস, সেপোনিক, মারোডিসিন নামক পদার্থ গর্ভবতী নারীদের অনেক ধরনের উপসর্গের সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হতে পারে।  
  • তেতুলঃ তেতুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। অতিরিক্ত ভিটামিন সি থাকার কারণে থাকার কারণে আপনার শরীরে প্রোজেস্টেরনের উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ফলাফলের দিকে নিয়ে যেতে পারে যেমন  প্রি-টার্ম জন্ম, গর্ভপাত বা ভ্রূণের কোষের ক্ষতি। তাই গর্ভাবস্থায় তেঁতুল খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
  • অ্যালকোহলঃ অ্যালকোহল গর্ববস্থায় সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলা উচিত। গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল গ্রহণ করলে শিশুর জন্মগত ত্রুটি বিকাশে বিলম্ব এবং আজীবন অক্ষমতার কারণ হতে পারে। তাই গর্ববস্থায় অ্যালকোহল গ্রহণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

গর্ভবতী মায়ের সর্বনিম্ন কত ওজন হওয়া উচিত গর্ভাবস্থায়

গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের ওজন হবে ১১ থেকে ১৫ কেজি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। তবে এই ওজন বৃদ্ধিটা এক একজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়ে থাকে। এটা নির্ভর করে গর্ভধারণের আগে মায়ের ওজন কেমন ছিল তার ওপরে। 

চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের মতে কার ওজন বাড়বে কার ওজন কমবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে মেয়েদের বডি মাস ইনডেক্স এর উপর। হবু মায়েদের ১০ থেকে ১৫ কেজি ওজন বাড়া এটা স্বাভাবিক। তবে সন্তান ধারণ করার একবারে প্রথম পর্যায়ে মেয়েদের শরীরের নানা রকম পরিবর্তন দেখা দেয়। তাই মেয়েদের বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, দুর্বল লাগার মত লক্ষণ থাকলেও খাদ্যাভাসেও পরিবর্তন হয়ে থাকে। 

অনেকেরই প্রথম পর্যায়ে শারীরিক পরিবর্তনের কারণে খাবার খেতে পারে না সে ক্ষেত্রে, হবু মায়েদের ওজন কিন্তু নাও বাড়তে পারে। পরে ভ্রুন বড় হতে থাকলে ওজন বেড়ে যায়। তাদের মতে একেকভ্রনের ক্ষেত্রে আন্তঃসত্ত্বা নারীদের 'বিএমআই' ১৮.৫ থেকে ২৪.৯ মধ্যে থাকাই ভালো। 

আরোও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়া যাবে কিনা? আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও ক্ষতির দিক 

কোন মায়ের ক্ষেত্রে যদি বিএমআই এর মান ১৮ এর নিচে থাকে এবং ৩০ উপরে থাকে তাহলে অবশ্যই সতর্ক থাকা জরুরি। গর্ভবতী মায়েদের ওজন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার, নিয়মিত হাঁটা চলাফেরা এবং ঠিকমতো ঘুমানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসাকরা।

গর্ভাবস্থায় কোন কোন শাক- সবজি খাওয়া গর্ভবতী মায়ের জন্য ভালো 

গর্ভাবস্থায় কোন কোন শাকসবজি খাওয়া গর্ভবতী মায়ের জন্য ভালো তা জেনে নিন--

  • টমেটোঃ টমেটোতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, এন্টিঅক্সিডেন্ট, বায়োটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে। যা গর্ভবস্থায় ভ্রুনের স্বাস্থ্যকর বিকাশের সাহায্য করে থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে থাকে, রক্ত ক্ষয় দূর করতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় টমেটো খেলে হজম শক্তি উন্নত করে এবং হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তবে টমেটো খাওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত
  • পালংশাকঃ গর্ভাবস্থায় পালং শাখা অত্যন্ত জরুরি। পালং শাকে থাকা প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গুলো শিশুর জ্ঞানীয়  বিকাশ এবং গর্ভবতী মায়েদের মেজাজ ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • ব্রকলিঃ গর্ভাবস্থার ব্রকলি খাওয়ার ভূমিকা রয়েছে অনেক । ব্রকলিতে রয়েছে পটাশিয়াম, ফোটেল, লোহা, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, এবং ভিটামিন কে দ্বারা সমৃদ্ধ। এছাড়া ব্রকলি তে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ব্রকলিতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট মা এবং সন্তানের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে থাকে।
  • মটরশুঁটিঃ গর্ভাবস্থায় মটরশুঁটি খাওয়া খুবই উপকারী। মটরশুটিতে রয়েছে প্রচুর ফলিক অ্যাসিড যা গর্ভাবস্থায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় মটরশুটি খেলে জন্মগতভাবে ব্রেইন এবং মেরুদন্ডের সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারে। গর্ভাবস্থায় মটরশুটি খেলে সন্তান জন্মদানের পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদন করতে সাহায্য করে থাকে।
  • মিষ্টি আলুঃ গর্ভাবস্থায় মিষ্টি আলু খাওয়া খুবই উপকারী এবং স্বাস্থ্যকর। মিষ্টি আলুতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট। কার্বোহাইড্রেট শরীরের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। সেই সাথে রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে। মিষ্টি আলুতে হয়েছে ভিটামিন এ যা ভ্রুনের বিকাশের সাহায্য করে থাকে।

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়া যাবে না 

গর্ভাবস্থায় ফল নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্যকর এবং উপকারী। তবে কিছু ফল গর্ভবতী নারীদের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত কোন কিছুই খাওয়া উচিত নয়। গর্ভাবস্থায় কিছু কিছু ফল অতিরিক্ত খেলে মায়ের শরীরে সমস্যা তৈরি করতে পারে যা গর্ভে শিশুরও ক্ষতি করতে পারে। গর্ভাবস্থায় কি কি ফল অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়া যাবে না তার নাম জেনে নিন--
  • পাকা পেঁপে
  • তরমুজ
  • খেজুর
  • লিচু
  • আঙ্গুর
  • হিমায়িত ও ক্যানজাত ফল

গর্ভাবস্থায় প্রত্যেকটি মেয়েদের যে ১৫ টি খাবারের তালিকায় রাখা প্রয়োজনীয়

গর্ভকালীন সময় প্রতিদিন খাবার তালিকায় সুষম, স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার রাখা অত্যন্ত জরুরী। এটি গর্ভকালীন সময়ে হবু মায়েদের বাড়তি পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিত করে ও গর্ভের শিশু সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে থাকে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বেশ কিছু খাবার থাকলে গর্ভস্থ শিশুটির মস্তিষ্কের বিষয় সঠিকভাবে হয়ে থাকে। আসুন জেনে নেই গর্ভাবস্থায় ১৫  টি খাবার তালিকা---
ডিম
দুধ
কলা
কমলা
মিষ্টি আলু
ব্রকলি
মটরশুঁটি
প্রোটিন যুক্ত খাবার
আমন্ড
আপেল
সবুজ শাকসবজি
আঁশ জাতীয় খাবার
মাছ
মাংস
ডাল

গর্ভাবস্থায় কি কি খাবার খেলে বাচ্চার ওজন বাড়ে

গর্ভাবস্থায় শিশু স্বাস্থ্য বৃদ্ধি ও সঠিক ওজন বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করলে গর্ভের শিশুর ওজন বৃদ্ধি করে থাকে। গর্ভকালীন সময়ে মায়ের খাদ্য তালিকায় যদি পুষ্টিকর খাবার থাকে তাহলে শিশুর শারীরিক বৃদ্ধির স্বাভাবিক থাকে। আসুন জেনে নেই গর্ভাবস্থায় কি কি খাবার খেলে বাচ্চার ওজন বাড়ে-- 

  • প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারঃ গর্ভকালীন সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এমন খাবার গর্ভের শিশুর পেশী ও টিস্যু গঠনে সাহায্য করে। মুরগি, মাছ, ডিম, সয়াবিন, বাদাম , মটরশুটি , ইত্যাদি খেতে হবে। 
  • দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারঃদুধ ও দুগ্ধজাত খাবার যেমন দই , পনির ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। এগুলো শিশুর হাড় গঠনের পাশাপাশি ওজন উচ্চতা ও শারীরিক গঠনে সাহায্য করে। ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে খেতে পারেন ডিমের কুসুম, কলিজা, কমলা, কচুশাক ও ছোট মাছ।
  • ফলমূল ও সবুজ শাকসবজিঃ ফলমূল ও সবুজ শাকসবজিতে রয়েছে ভিটামিন , মিনারেল আঁশ যা শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে সাহায্য করে থাকে। এজন্য খেতে পারেন কলা আপেল , পাকা  পেয়ারা। গর্ভাবস্থায় ভিটামিন সি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া বিভিন্ন শাকসবজি দিয়ে আপনি স্যুপ বানিয়ে খেতে পারেন
  • পানিঃ গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়া উচিত। এতে গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকার পাশাপাশি গর্ভবতী মহিলাদেরও শরীরে পুষ্টি শোষণ নিশ্চিত হবে। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি খাওয়া উচিত।

লেখকের শেষ মন্তব্য 

প্রিয় পাঠক আজকে এই আর্টিকেলে গর্ভাবস্থায় প্রত্যেকটি মেয়েদের যে ১৫ টি খাবার খাদ্য তালিকায় রাখা জরুরী  এই সকল বিষয়ে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি গর্ভাবস্থায় প্রত্যেকটি মেয়েদের যে ১৫ টি খাবার খাদ্য তালিকায় রাখা জরুরী এই বিষয় সম্পর্কে আপনারা জানতে পেরেছেন। যদি আজকের এই আর্টিকেল পড়ে আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই পরিবার এবং বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url