গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে করণীয় কি এবং ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
প্রিয় পাঠক গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে করণীয় কি এবং ডায়াবেটিস
কমানোর উপায় এই বিষয়ে অনেকে জানতে চান। তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেল
নিয়ে আমরা হাজির হয়েছি। কারণ আজকের এই আর্টিকেলে গর্ভাবস্থায়
ডায়াবেটিস হলে করণীয় কি এবং
ডায়াবেটিস কমানোর উপায় এই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে। ডায়াবেটিস সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পেতে আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইল। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
.
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের লক্ষণ কি এবং কিভাবে বুঝতে পারবো ডায়াবেটিস হয়েছে কিনা
গর্ভাবস্থায় অনেক নারীরই ডায়াবেটিস দেখা যায়। গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়ের
রক্তে সুগারের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে তাকে গর্ভকালীন
ডায়াবেটিস বলে। গর্ভকালীন ডায়বেটিস গর্ভাবস্থায় ও প্রসবের পরে আপনার ও
আপনার সন্তানের জন্য বিভিন্ন রকম সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে এটা যদি
প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা নেয়া হয় তাহলে সমস্যা অনেকটা
কমে আসবে।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের লক্ষণ গুলো হলো--
- ঘনঘন পানি পিপাসা লাগা
- ঘন ঘন প্রসাব
- স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্লান্ত লাগে
- যৌনাঙ্গে চুলকানি
- ঝাপসা সৃষ্টি
- বমি বমি ভাব
- ওজন হ্রাস
- ঘন ঘন ইনফেকশন
- ঘা দেরিতে শুকানো
কিভাবে বুঝবেন ডায়াবেটিস হয়েছে কিনা সেটা জেনে নিন--
প্রত্যেক নারীর গর্ভধারণের ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ
স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরামর্শ অনুযায়ী রক্তে
শর্করা পরীক্ষা করে নিতে হবে। কারণ এই সময়টি রক্তের শর্করা পরীক্ষার সবচেয়ে
সেরা সময় বললে বিবেচনা করা হয়।
শুরুতে স্বাভাবিক থাকলে ২৪ সপ্তাহের পর আবার করতে হবে। এই পরীক্ষার নাম হল হল
ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট। ঘন ঘন পানি তৃষ্ণা পাওয়া, দুর্বলতা ক্লান্তি
অনুভব করা, মুখের ভিতরে শুকিয়ে যাওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, ঘনঘন প্রসব হলে
ডায়াবেটিস হয়েছে বলে সন্দেহ করতে হবে।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে করণীয় কি
গর্ভকালীন সময়ে অনেক নারীর ডায়াবেটিস দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস
একটি জটিল সমস্যা। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হলে মায়ের সঙ্গে সঙ্গে শিশুটি ঝুঁকির
মধ্যে পড়ে যায়। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে করণীয় কি জেনে নিন--
- স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন ঃ গর্ভাবস্থায় খাবার সমৃদ্ধ খাবার এবং কম চর্বিযুক্ত এবং ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। সুগার লেভেল ঠিক রাখার জন্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য রঙিন শাকসবজি ও তাজা ফলমূল খেতে হবে । কারণ এসব খাবার রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি, ভিটামিন, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে দেয় না।
- গর্ভাবস্থায় আপনি খেতে পারেন আখরোট। আখরোট রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড। এই ফ্যাটি অ্যাসিড ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি শরীরে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে থাকে।
- তবে চিকিৎসা করা মনে করেন এসব খাবারের পাশাপাশি আপনাকে মানসিক দুশ্চিন্ত দূর করতে হবে। আর নিয়ম মাফিক হাটাহাটি আর ব্যায়াম করার অভ্যাস এই রোগের নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে ।
- গ্লুকোজ টেস্টঃ গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত গ্লুকোজ টেস্ট করাবেন। সবচেয়ে ভালো হয় বাসায় একটি গ্লুকোমিটার কিনে নেওয়া। সকালে খালি পেটে, ব্রেকফাস্ট এর দুই ঘন্টা পর এবং লাঞ্চের দুই ঘন্টা পর এভাবে নিয়ম করে গ্লুকোজ মেপে নিবেন। একটি চার্টে লিখে রাখবেন যেন ডাক্তারকে পরবর্তী সময়ে দেখানো যায়।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুনঃ গর্ভকালীন সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিমাণ পানি পান করা উচিত। দিনে অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন। পর্যাপ্ত পানি শরীর থেকে শর্করা প্রসবের মাধ্যমে বের করে দেয়।
ঘরোয়া ভাবে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস দূর করার উপায়
ডায়াবেটিস যে ধরনের হোক না কেন ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে এবং সুস্থভাবে জীবন
যাপন করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব একটা কঠিন বিষয় নয়। এজন্য ডাক্তারের
পরামর্শ ও ওষুধের পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস দূর করার উপায়
আপনাদের মাঝে আলোচনা করব। তাহলে চলুন ঘরোভাবে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস দূর করার
উপায় গুলো জেনে নিন--
- মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করুনঃ সাধারণত মিষ্টি জাতীয় খাবার, ফাস্টফুড , কোমল পানীয় ভারী খাবার স্থুলতা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। স্থূলতা বা অতিরিক্ত মোটিয়ে যাওয়ার কারণে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। শরীরের দিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে কোনভাবেই যেন শরীর মোটিয়ে বা ওজন বেশি না হয়। এজন্য বিশেষজ্ঞরা ফাস্টফুড, মিষ্টি, পোলাও ,বিরিয়ান, রেডমিটির মতো ভারী খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। প্রক্রিয়ার খাবার এবং কোমল পানীয় সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা উচিত।
- নিয়মিত শরীর চর্চাঃ নিয়মিত হাটাহাটির মতো হালকা ব্যায়াম করলেও তা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে। যাদের অতিরিক্ত ওজন রয়েছে তারা বিভিন্ন শরীর চর্চা পদ্ধতিতে ওজন কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকলে হাইপারগ্লাইসেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
- ধূমপান ও মদ্যপান পরিহারঃ চিকিৎসা করে বলেছেন ডায়াবেটিস রোগ ঠেকাতে যেসব খারাপ অভ্যাস রয়েছে তাদের মধ্যে মদ্যপান সবার আগে পরিহার করতে হবে। কারণ ধূমপান মদ্যপান ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। তাই ডায়াবেটিস রোগ ঠেকাতে অবশ্যই ধূমপান থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
- কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করুনঃ
- কার্বোহাইড্রেট গুলো চিনিতে ভেঙে যায় এবং তারপরে ইনসুলিন শরীরের শক্তির জন্য চিনি ব্যবহার করেন এবং সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে থাকে। এই প্রকৃতি ভেঙে যায় যদি খাবারে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে। যার কারনে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। খাওয়া কার্বোহাইড্রেট ট্র্যাক রাখুন আপনি এই সম্মুখীন এড়াতে পারবেন।
- ঘুমের ধরন নিয়মিত করুনঃ সুস্বাস্থ্য উন্নত করতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকার। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হলে রক্তের শর্করা এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে ক্ষুধা এবং ওজন বৃদ্ধি করতে পারে। তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম প্রয়োজন।
- ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলাঃ গর্ভাবস্থায় যাদের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে তারা অবশ্যই নিয়মিত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখা উচিত। ডাক্তার যদি ইনসুলিন বা অন্য কোন ওষুধ দিয়ে থাকেন তাহলে নিয়মিত সেবন করা উচিত।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে কি কি ফল খাওয়া যাবে না
নিচে এমন কিছু ফল আলোচনা করা হলো যেগুলো গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে খাওয়া যাবে
না। চলুন সেই ফলগুলোর নাম জেনে নেই--
- আমঃ আম একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু ফল। কিন্তু এতে প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। যা রক্তে শর্করার মাথা দ্রুত বাড়িয়ে তুলতে পারে। গ্রীষ্মকালে আম সবার পছন্দের ফল হলেও এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। যারা ডায়াবেটিস রোগী তাদের নিয়মিত আম খাওয়া উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মাঝে মাঝে অল্প পরিমাণে আম খাওয়া যেতে পারে।
- কলাঃ কলা একটি পুষ্টিকর ফল এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ ধারণ করলে এগুলোতে কার্বোহাইড তুলনামূলকভাবে খুব বেশি থাকে। এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। সুতরাং ছোট কলা বেছে নিতে পারেন বা পরিমিত পরিমানে সেবন করলে রক্তের শর্করার ওপর তাদের প্রভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- লিচুঃ লিচু একটি সুস্বাদু ফল। লিচুতে প্রাকৃতিক শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে। লিচু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। লিচু খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ দ্রুত বাড়তে পারে। তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা অবশ্যই লিচু এড়িয়ে চলা উচিত।
- তরমুজঃ তরমুজ শরীরকে ঠান্ডা এবং হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। কারণ তরমুজে রয়েছে ৯২% পানি। কারণ তরমুজের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) বেশ উচ্চ মাত্রায় থাকে যা রক্তের শর্করা মাত্রা দ্রুত বাড়ি তুলতে পারে।
- আঙ্গুরঃ আঙ্গুর মিষ্টি জাতীয় ফল। আঙ্গুরে উচ্চ চিনির কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়তে পারে। পরিমিতভাবে আঙ্গুর খাওয়া এবং প্রোটিন বা স্বাস্থ্যকর চর্বি গুলোর সাথে সাথে যুক্ত করা রক্তের শর্করার ওপর তাদের সাহায্য করতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে কি বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আর অন্যান্য ডায়াবেটিসের চিকিৎসা বেশ কিছুটা পার্থক্য
রয়েছে। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে গর্ভের বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। এজন্য
সবচেয়ে ভালো হলো ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ইনসুলিন ব্যবহার করা। তবে সব ধরনের
ইনসুলিন নিরাপদ নয়। ইনসুলিন অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে
হবে। গর্ভাবস্থার সময় রক্তে শর্করা রাখতে হবে খালি পেটে ৫.৩ আর খাওয়ার ২
ঘণ্টা পর ৬.৭ মিলিমোল/লিটারের নিচে।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা মা ও শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখা প্রয়োজন।
খালি পেটে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৪.৫ থেকে ৫.৫ মিলিমোল লিটার এবং খাওয়ার দুই
ঘন্টা পর এর মাত্রা ৫ থেকে ৬ মিনিমোল বা লিটারের মধ্যে থাকা উচিত।
এই মাত্র কম বা বেশি হলে মা এবং শিশু উভয়ের জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে।
গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরী। চিকিৎসকের সাথে
নিয়মিত যোগাযোগ ও পরামর্শ করলে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কমানোর সম্ভব।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কমালে মা এবং শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করা যায়।
লেখকের শেষ মন্তব্য
প্রিয় পাঠক গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে করণীয় কি এবং ডায়াবেটিস কমানোর
উপায় গুলো বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে
ডায়াবেটিস সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে পেরেছেন।
যদি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার
করে দিবেন। এরকম আরো নিত্য নতুন তথ্য পেতে আমার ওয়েবসাইটে নিয়মিত
ভিজিট করবেন। আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ
হাফেজ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url