গর্ভাবস্থায় পাকা পেঁপে খাওয়া যাবে কিনা এবং নিরাপদ কিনা বিস্তারিত জেনে নিন

 গর্ভাবস্থায় পাকা পেঁপে খাওয়া যাবে কিনা এবং নিরাপদ কিনা এই বিষয় অনেকেই জানেন না। তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আজকের এই আর্টিকেলে গর্ভাবস্থায় পাকা পেঁপে খাওয়া যাবে কিনা এবং 

নিরাপদ কিনা এ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। প্রিয় পাঠক আপনি যদি গর্ভাবস্থায় পাকা পেঁপে খাওয়া যাবে কিনা এবং নিরাপদ কিনা এই বিষয়ে জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি সম্পন্ন পরার জন্য বিশেষ অনুরোধ থাকলো।

.

গর্ভাবস্থায় পাকা পেঁপে খাওয়া যাবে কিনা

পেঁপে সুস্বাদু পুষ্টিকর ফলের মধ্যে অন্যতম। পেঁপেতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, ও অত্যন্ত কম পরিমাণে চর্বিযুক্ত উপাদান।পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এক কথায় পেঁপেকে বলা হয় ভিটামিনের স্টোর। 

পেঁপে আমাদের দেহের জন্য পুষ্টিকর এবং উপকারী ফল। গর্ভবতী মহিলাদের অনেক কিছু মেনে চলতে হয়। খাবারে অনেক পরিবর্তন আনতে হয়। এ সময় পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া যেমন জরুরী তেমনি কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খাওয়া উচিত নয়। গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খাওয়া নিরাপদ নয়। 

আরোও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কতবেল খাওয়ার উপকারিতা এবং ক্ষতির দিক

বাড়িতে বয়স্ক লোকেরা গর্ভবতী নারীদের কাঁচা পেঁপে খেতে নিষেধ করেন কারণ মূলত গর্ভপাতের কারণে বয়স্ক লোকেরা গর্ভকালীন সময়ে কাঁচা পেঁপে না খাওয়ার জন্য সতর্ক করে থাকেন। কাঁচা পেঁপে না খাওয়ার অবশ্যই এর কারণ রয়েছে আমরা দেখেছি পেঁপের মধ্যে থেকে সাদা দুধের মধ্যে তরল পদার্থ বের হয়। 

বিশেষজ্ঞদের মতে গর্ভপাতের কারণের জন্য দায়ী ওই ল্যাকটোজের মধ্যে থাকা এনজাইম গুলো। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেছেন  পেঁপেতে ল্যাকটোজ থাকার কারণে জরায়ুতে  সংকোচনের ঝুঁকি তৈরি হয়। এইসব কারণেই গর্ভপাত বা  অকাল প্রসবের ঝুঁকি হয়ে থাকে। এছাড়া পেঁপেতে পেপিন যা প্রোটিনকে ভেঙ্গে  দেয়। এ কারণে ভ্রুনের ক্ষতি হতে পারে। 121 1807

পেঁপে পাকতে শুরু করলে ল্যাকটোজ এর পরিমাণ কমে যায়। সপ্তাহে একবার বার বার দুই বার পাকা পেঁপে খেলে যেকোনো ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যায়। কারণ পাকা  পেঁপেতে ল্যাকটোজের পরিমাণ কম থাকে।  গর্ভকালীন সময়ে কাঁচা পেঁপে খাওয়া একেবারে নিষিদ্ধ। তবে পাকা পেঁপে গর্ভকালীন সময়  সীমিত পরিমানে খাওয়া যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় কাচা পেঁপের তরকারি খাওয়া যাবে কি

গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপের তরকারি খাওয়া যাবে কিনা এই বিষয়ে অনেকেই জানেন না। পেঁপে রান্না করলেন পেঁপেতে পেপেইন নামক এনজাইমের পরিমাণ কমে যায়। পেপেইন নামক এনজাইম কমে গেলে গর্ভবতী মহিলারা সেই পেঁপে খেতে পারবে। 

অর্থাৎ রান্না করা পেঁপেতে যেহেতু পেইন নামক এনজাইম এর পরিমাণ কমে যায় তাই গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপের তরকারি খাওয়া যাবে। তবে রান্না করা পেঁপে সপ্তাহে দুইবারের বেশি না খাওয়াই ভালো।

গর্ভাবস্থায় পাকা পেঁপে খাওয়া কতটা নিরাপদ 

বঙ্গবন্ধু শেখ  মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের দিন অধ্যাপক ডা.এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন  গর্ভাবস্থায় অবশ্যই পেঁপে খাওয়া যাবে। তবে সেটা পাকা পেঁপে হতে হবে। গর্ববস্থায় কাঁচা পেঁপে এড়িয়ে চলায়  উত্তম। কাঁচা পেঁপে খেলে এসিড তৈরি হতে পারেন যার ফলে বদহজম বমি বমি ভাব ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।তাই কাঁচা পেঁপে এড়িয়ে চলতে  হবে।  

এ সময় খেতে হবে পাকা পেঁপে। পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী বলেন গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খাওয়ায় সমস্যা তৈরি হতে পারে। কাঁচা পেঁপের মধ্যে ল্যাকটোজ থাকে। ল্যাক্টোজ এর মধ্যে উপস্থিতি উপাদান পেপেইন  জরায়ুর রক্তপাত ঘটিয়ে বিভিন্ন জটিল সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী বলেন গর্ভাবস্থায় পাকা পেঁপে খাওয়া যাবে। 

কারণ  পাকা পেঁপেতে ল্যাকটোজ এর পরিমাণ কম থাকে। পাকা পেপেতে ভিটামিন এ, বি, পটাশিয়াম বিটা ক্যারোটিন রয়েছে। এটি হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে থাকে। অনেক গর্ভবতী মহিলারা অতিরিক্ত সতর্ক হয়ে গর্ভাবস্থায়  পাকা পেঁপে খাওয়া বাদ দিয়ে দেন। এটা করা একদম ঠিক নয়। তারা পাকা পেঁপের পুষ্টিগুণ থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হয়ে থাকে। 

পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী সতর্ক করে  দিয়ে বলেন, আমাদের দেশে যেভাবে রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে ফলগুলোকে পাকানো হয়ে থাকে এতে ফল ভালোভাবে পাকে না। তাই গর্ভাবস্থায় পাকা পেঁপে খেতে হলে  নিশ্চিত হয়ে গাছ পাকা পেপে খাওয়ায় উত্তম। কারণ গাছপাকা পেঁপেতে ল্যাকটোজ এর পরিমাণ কম থাকে। ল্যাকটোজ এর পরিমাণ কম থাকায় গর্ভাবস্থায় পাকা পেঁপে খাওয়া  যাবে। তবে গর্ভাবস্থায় যে কোন খাবার খাওয়ার আগে অবশ্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।

পাকা পেঁপে তে কি কি পরিমান পুষ্টিগুণ রয়েছে

বাংলাদেশের উষ্ণ জলবায়ুতে প্রচুর পরিমাণে জন্মানো পেঁপে অত্যন্ত উপকারী এবং একটি পুষ্টিকর ফল। পেঁপেতে বিভিন্ন উপকারী উপাদান থাকে যেমন ফোলেট, ভিটামিন এ, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, ফাইবার, এবং প্যান্টোথেনিক ও এসিড থাকে। আপনি যদি প্রতিদিন পাকা পেঁপে খান তাহলে শরীরের বিভিন্ন রকমের পুষ্টিগুণ পাওয়া যাবে। 

নিয়মিত পাকা পেঁপে খেলে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন কে, ক্যালসিয়াম ও কিছু উপকারে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও মিলবে। যা আমাদের শরীরের পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে সাহায্য করবে। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা পেঁপেতে শর্করার পরিমাণ থাকে ৭.২ গ্রাম, ৩২ কিলো ক্যালরি শক্তি, ০.৮ গ্রাম আশ, ০.৬ গ্রাম আমিষ থাকে,০.৫ গ্রাম খনিজ পদার্থ থাকে,৬.০ গ্রাম সোডিয়াম থাকে,৬৯ গ্রাম পটাশিয়াম, ও ০.৫ মি. গ্রাম আয়রন থাকে। 
এছাড়াও পেঁপেতে  রয়েছে কিছু পরিমাণে ভিটামিন ই, বিটা ক্যারোটিন ও এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীর ও ত্বক ভালো রাখতে আমাদের সাহায্য করে। পাকা পেঁপে প্রাকৃতিকভাবে পটাশিয়ামের উৎস। হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চাইলে পটাশিয়ামের গুরুত্ব রয়েছে অনেক। কারণ উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এই পটাশিয়াম। 

এছাড়া অনেক নারী অনিয়মিত ঋতুচক্রের সমস্যায় ভুগে থাকেন। এমন হলে আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন তাহলে এই সমস্যা দূর হবে। পাকা পেঁপে অনেক রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে থাকে। চিকিৎসকেরা বলেছেন ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভরপুর পাকা পেঁপে ক্যান্সারের মতো মরন ব্যাধির প্রতিরোধক। ক্যারোটিনয়েড, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই রয়েছে পেঁপেতে যা আমাদের ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাকা পেঁপে পেটের সমস্যা দূর করতে দারুন কাজে দেয়। 

পেঁপেতে পেপাইন নামক এনজাইম, উচ্চ মাত্রার ফাইবার এবং পর্যাপ্ত জল কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পাইলস রোগীর জন্য বিশেষ উপকারী। পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। হাড়ের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এই পাকা পেঁপে। এতে উপস্থিত ভিটামিন কে ক্যালসিয়াম শোষণ করে হারকে সুস্থ রাখে 

এবং মজবুত রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও অস্টিওপোরোসিসের মত হাড়ের সমস্যায় ভুগলে নিয়মিত পাকা পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ভালো। অনেকেই অ্যাজমা সমস্যায় ভুগে থাকেন। এই সমস্যা দূর করতে পারে পাকা পেঁপে। এ ধরনের সমস্যা দূর করার জন্য ছোটবেলা থেকে পাকা পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পাকা পেঁপেতে থাকে বিটা ক্যারোটিন যা অ্যাজমার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে থাকে। 

যাদের অ্যাজমা আছে তারা নিয়মিত পাকা পেপে খাবেন এতে একলা সমস্যা অনেকটা কমে আসবে। চোখের জন্য পাকা পেঁপে অনেক উপকারী একটি ফল। এন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, এর উপস্থিতির কারণে চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে। তাই চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে পাকা পেঁপে অনেক উপকারী তাই নিয়মিত খাদ্য তালিকায় পাকা পেঁপে রাখা উচিত। পাকা পেঁপেতে রয়েছে প্রায় ৮৮ শতাংশ জলীয় উপাদান। 

যা গ্রীষ্মকালে শরীরের পানে শূন্যতা দূর করতে দারুন ভাবে সাহায্য করে।পাকা পেঁপে শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রেখে শরীরকে ঠান্ডা রাখে। যা তীব্র গরমে আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। আপনার যদি গ্যাস্ট্রিকের প্রচুর সমস্যা থাকে তাহলে আপনি সকালে খালি পেটে প্রতিদিন পাকা পেঁপে খেতে পারেন। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পাকা পেঁপে খেতে পারেন তাহলে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং এবং খাবারের প্রতি আপনার ইচ্ছা বৃদ্ধি পাবে। 

লেখকের শেষ মন্তব্য

প্রিয় পাঠক গর্ভাবস্থায় পাকা পেঁপে খাওয়া যাবে কিনা এবং নিরাপদ কিনা এই বিষয় নিয়ে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এই পোস্টটি আপনার পরিচিত গর্ভবতী মহিলাদের মাঝে শেয়ার করে দিন এর ফলে তারা এটি জানতে পারবে। আশা করি আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনার উপকৃত হয়েছেন। 
যদি আজকের এই পোস্টটি ভাল লেগে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার পরিবার এবং বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ সব পোস্ট পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি ফলো করে রাখতে পারেন আজকের মত এখানেই শেষ করছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। ''ধন্যবাদ''

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url