গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়া যাবে কিনা? আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও ক্ষতির দিক
গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়া যাবে কিনা? আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও ক্ষতির
দিক অনেকেরই অজানা তাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকের এই
আর্টিকেলে আমলকি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
আশা করি নিম্নের আলোচনার মাধ্যমে আপনি আমলকি সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে পারবেন। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
.
আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ আমলকি শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আমলকিতে থাকা বিভিন্ন উপাদান
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে।চলুন আমলকির উপকারিতা
সম্পর্কে জেনে নেই --
আমলকি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আমলকিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। এর উপাদান সাধারণত জ্বর এবং
মুত্রনালী সংক্রামক রোধে সহায়ক।
বর্তমান সময়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সবারই কম বেশি রয়েছে। পেটে গ্যাস বা এসিডিটি
সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত আমলকির জুস খুবই কার্যকরী।নিয়মিত আমলকি খেলে
উচ্চ রক্তচাপ ঠিক রাখে।
আমলকিতে রয়েছে ভিটামিন সি যার রক্তনালী প্রসারিত করতে সাহায্য করে থাকে।
যা স্বাভাবিক রক্তচাপ ধরে রাখে এবং রক্তচাপ বাড়তে দেয় না।
যাদের মাড়ি থেকে রক্ত বের হয় এবং নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হয় তারা নিয়মিত আমলকি
খেলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে। আমলকি ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ দাঁত ও মাড়ির
স্বাস্থ্য ভালো রাখে। আমলকি দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধেও দারুন কার্যকরী ভূমিকা পালন
করে।
আমলকির রস মধুর সাথে মিশিয়ে পান করলে চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, এটি চোখের ভেতরে চাপকে হ্রাস করে, দূরের জিনিস দেখতে
পায় এবং ছানি পড়তে দেয় না।
আমলকি ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে। ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ রেখে
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে আমলকি। কোলেস্টেরল লেভেলও কম রাখতে
সাহায্য করে থাকে।
আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি এর প্রধান উৎস হচ্ছে এই
আমলকি। ভিটামিন সি শরীরে প্রতিরোধ শক্তি বাড়িয়ে তুলে। সংক্রমনের সঙ্গে লড়াই
করার শক্তি যোগায় এমনকি শরীরের যে কোন অসুস্থতা দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য
করে থাকে এই আমলকি।
আমলকিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান সূর্যের ক্ষতিকারক UV রশ্মি
থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। ত্বকের কোলাজেন উপাদান
বৃদ্ধি করে আমলকি। যার ফলে ত্বকের সজীবতা বজায় থাকে এবং ত্বকে বলে রেখা পড়তে
দেয় না।
আমলকি লিভারের জন্য খুবই উপকারী। এখন অনেকেই আছেন যাদের ফ্যাটি লিভারসহ
যকৃতের নানা ব্যধিতে ভুগে থাকেন। তাদের জন্য এই আমলকি খুবই কার্যকরী।
আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। শরীর থেকে সব বিষাক্ত
পদার্থ বের করতে সাহায্য করে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এ ভরপুর এই আমলকি।
চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে এই আমলকি এবং চুলের রূপচর্চার জন্য আমলকি একটি
গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমলকির রস চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে
সাহায্য করে। আমলকি চুলের খুশির সমস্যা দূর করে ও পাকা চুল প্রতিরোধ করে ।
ক্ষতিকর দিকঃ
আমলকিতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিভিন্ন ধরনের রোগের হাত থেকে
বাঁচাতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত আমলকি খেলে উপকারের চেয়ে ক্ষতি হতে পারে।
আসুন জেনে নিন অতিরিক্ত আমলকি খেলে কি ক্ষতি হতে পারে--
অতিরিক্ত আমলকি খেলে হাটের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। চিকিৎসকের মতে যাদের হৃদরোগের
সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই আমলকি খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে
খাওয়া উচিত।
আমলকি শরীরের অনেক তাপমাত্রা অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। তাই অতিরিক্ত আমলকি খেলে জ্বর
সর্দি কাশি হতে পারে।
যাদের হজমের সমস্যা এবং যাদের পেটে সহজে সহজে এসিড তৈরি হয় সেরকম লোকদের
আমলকি খাওয়া থেকে দূরে থাকায় উত্তম। আমলকি টক-ভাব এতটাই প্রবল যে এরা
সহজে পেটে অ্যাসিডিটি তৈরির কাজ করতে পারে
গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়া যাবে কিনা
গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়া যাবে। আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি,
ফাইবার, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। চিকিৎসা করা গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়ার
পরামর্শ দিয়েছেন। গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়া একদম নিরাপদ গর্ভাবস্থায় মুড
ভালো রাখতে আমলকির চমৎকার ভূমিকা রয়েছে।
গর্ভাবস্থায় আমলকি খেলে সময়ের আগে প্রসব হওয়ার ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।
গর্ভাবস্থায় আমলকি খেলে শিশুর স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। আমলকির মধ্যে
থাকা আইরন রক্তস্বল্পতা সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করে থাকে।
গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়ার নিয়ম কারুনঃ
আমলকি এমন একটি খাবার যা গর্ভাবস্থায় খাওয়া খুব উপকারী। গর্ভাবস্থায়
মায়েদের সুরক্ষা রক্ষার জন্য আমলকি খুবই উপকারী। আমলকি এক ধরনের ভেষজ ফল।
আমলকিতে রয়েছে সলিউবল ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি। গর্ভাবস্থায়
গর্ভবতী নারীরা কাঁচা আমলকি খেতে পারেন। এছাড়া আমলকির জুস ও খেতে
পারেন। বাজারে বিভিন্ন ধরনের আমলা জ্যাম, আচার পাওয়া যায় সেগুলোও খেতে
পারেন।
তবে কতটুকু খাবেন সেটা জানাও খুব জরুরী। রেগুলার একটি বা দুইটি করে আমলকি
খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও আমলকির জুস ৫-১০ মিমি খেলেই যথেষ্ট। পানির সাথে একটা
চামচ আমলকির গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারেন। বাজারে আমলকির যেসব আচার পাওয়া যায়
সেগুলো অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যাতে অতিরিক্ত লবণ বা চিনি না থেকে।
গর্ভাবস্থায় সকালের সময়টা খুব অস্বস্তিকর মনে হয়। এই সময় বেশিরভাগ হবু
মায়েরা ক্লান্তি অনুভব করা, বমি বমি ভাব হয়, কোন কাজ করতে ইচ্ছে হয় না,
মেজাজ ভালো থাকে না। আমলকি খেলে এই সকল সমস্যা দূর করতে চমকপ্রদ ঔষধ হিসেবে কাজ
করে।
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণ আমলকী খেলে কি ক্ষতি হতে পারে
আমলকির খাওয়ার ক্ষতিকর তেমন দিক নেই। তবে কোন কিছুই অতিরিক্ত খাওয়ার ঠিক নয়।
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত আমলকি খেলে কিছুটা সমস্যা দেখা দিতে পারে।গর্ভাবস্থায়
অতিরিক্ত আমলকি খেলে গ্যাস্ট্রিক বা হজমের সমস্যা হতে পারে। গর্ভাবস্থায়
অতিরিক্ত আমলকি খেলে পেট ফুলে যেতে পারে। অবশ্যই সব সময় মনে রাখবেন অতিরিক্ত কোন
কিছুই গর্ভের বাচ্চার জন্য ভালো নয়। তাই যে কোন খাবারে পরিমিত মাত্রায় খাওয়া
উচিত।
আমলকি খাওয়া কাদের ঠিক নয়ঃ
আমলকির উপকারিতা সম্পর্কে কমবেশি সবারই জানা। আমলকির রসে রয়েছে ভিটামিন সি যা
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আমলকি ত্বক ও চুলের সমস্যা দূর করতে
সাহায্য করে। কিন্তু জানেন কি এমন অনেকেরই আছে যাদের আমলকির রস খাওয়া একবারে
নিরাপদ নয়। এই রস পানে অনেকের উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়। চলুন জেনে নেই
কাদের আমলকি খাওয়া ঠিক নয়-
লিভার সংক্রান্ত সমস্যাঃ যাদের লিভারের সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে তাদের আমলকির
রস খাওয়া খুবই ক্ষতিকর। আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। থাকা
ভিটামিন সি এবং অত্যন্ত অ্যাসিটিক প্রকৃতি লিভারের সমস্যা বাড়াতে পারে। যাদের
লিভার সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই আমলকির রস পানের আগে ডাক্তারের
পরামর্শ নিন।
নিম্ন রক্তচাপ থাকলেঃ যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের জন্য আমলকির রস খুবই
উপকারী। কিন্তু যাদের নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে তাদের জন্য আমলকি রস খুব ক্ষতিকারক।
আমলকির রসে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কিন্তু যাদের
নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের আমলকি রস না খাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া
হয়েছে।
কিডনির উপর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ যাদের কিডনি সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য আমলকি
রস পান অনেক সময় ক্ষতিকর হতে পারে। এই রস প্রকৃতপক্ষে মূত্রবর্ধক
বৈশিষ্ট্যপূর্ণ, তবে এতে রয়েছে কিছু বায়োএকটিভ একটি উপাদান যা কিডনি রোগের
কিছু কোষ এবং টিস্যুর ক্ষতি করতে পারে। তাই যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে আমলকি
রস খাওয়া একদম এড়িয়ে চলুন।
আমলকির মধ্যে কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে
আমলকি ভিটামিন সি তে ভরপুর একটি ফল। প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকিতে রয়েছে ৯ মাইক্রো
গ্রাম ক্যারোটিন, ০.০৩ মিলিগ্রাম থায়ামিন, ০.০১ মিলিগ্রাম রিবোফ্লেভিন ও
১.২ মিলিগ্রাম লৌহ, ৬০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন, ৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম,.২০
মিলিগ্রাম ফসফরাস পাওয়া যায়।
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে আমলকিতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ পেয়ারা ও কাগজি লেবুর
চেয়ে ৩ গুণ ও ১০ গুণ বেশি ভিটামিন সি আছে। কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুন বেশি
ভিটামিন সি রয়েছে, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুন এবং কলার
চেয়ে ৬০ গুন বেশি ভিটামিন সি রয়েছে।
লেখকের শেষ মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আজকের এই আলোচনায় গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়া যাবে কিনা? আমলকি
খাওয়ার উপকারিতা ও ক্ষতির দিক সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন। আশা
করি আজকের আর্টিকেলটি পরে আপনার অনেক উপকৃত হয়েছেন। যদি আজকে এই আর্টিকেলটি
পড়ে আপনার উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাদের পরিবার এবং বন্ধুদের মাঝে
শেয়ার করে দিবেন ''ধন্যবাদ''।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url