পেশার লো হলে করণীয় ১৭ টি কাজ - পেশার লো এর লক্ষণ কি কি
প্রিয় পাঠক পেশার লো হলে করণীয় ১৭ টি কাজ এবং পেশার লো এর লক্ষণ
কি কি এই বিষয় নিয়ে আজকের আর্টিকেল নিয়ে হাজির হয়েছে। কারণ আজকের এই
আর্টিকেলে পেশার লো হলে করণীয় ১৭ টি কাজ এবং পেশার লো এর লক্ষণ কি
কি এই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে।
এই আর্টিকেলে লো পেশার সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য আলোচনা করা হবে। তাই লো পেশার সম্পর্কে জানতে হলে আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল। তাহলে চলুন আজকের এই তথ্যবহুল আর্টিকেলটি শুরু করা যাক।
.
হাই প্রেসার হলে করনীয় কি
হাই পেশার বিশ্বজুড়ে একটি নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের অনেক মানুষ
উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকেন। একজন মানুষ যদি সুস্থ থাকতে চায় তাহলে অবশ্যই
তার পেশার, পালস, ওজন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকতে হবে। কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করলে
হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। চলুন হাই প্রেসার হলে করণীয় কি জেনে
নিই--
- লেবুর রসঃ লেবুর রস হাই প্রেসার কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামের পাশাপাশি লেবুর রস পান করলে শরীরে হাই ব্লাড প্রেশার কমাতে সাহায্য করে থাকে। এক গ্লাস গরম পানিতে অর্ধেক লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে খেলে উচ্চ রক্তচাপ তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আসে।
- রসুনঃ উচ্চ রক্তচাপ কমাতে রসুন দারুন ভাবে কার্যকরী। তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে রসুন খুবই উপকারী। ব্লাড প্রেসার অনেক বেড়ে গেলে সাথে সাথে একবার দুই টুকরো রসুন সরাসরি খেয়ে নিন অথবা কুচি করে মধুর সঙ্গেও মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন।
- আদাঃ উচ্চ রক্তচাপ কমাতে আধা অনেক উপকারী। আদা হৃদপিন্ডের সংকোচন শক্তি এবং হার কমাতে সাহায্য করে থাকে। আদা ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার হিসেবে কাজ করে যার রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে থাকে। পানিতে কয়েক টুকরো আদা সিদ্ধ করে নিন। তারপর ঠান্ডা করে আদা চা পান করুন।
- আপেল সিডার ভিনেগারঃ হাই ব্লাড প্রেসার কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার ও অনেক উপকারী। আপেল সিডার ভিনেগার শরীরে একপ্রকার রেনিন নামক এনজাইমের কার্যকলাপ হ্রাস করতে সাহায্য করে থাকে। এক গ্লাস গরম পানিতে তিন চামচ আপেল সিডার ভিনেগার ভালোভাবে মিশিয়ে পান করুন।
- লবণ কম খাওয়াঃ লবণ রক্তচাপ বাড়ায়। তাই লবণ খাওয়ার অভ্যাস কম করতে হবে। প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে পাঁচ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়। বাজারের কেনা খাবারগুলোতে লবণ বেশি থাকে। তাই এসব খাবার কম খাওয়া উচিত।
- মানসিক চাপ কমানোঃ মানসিক চাপ রক্ত চাপ বাড়ায়। তাই মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করতে হবে। মানসিক চাপ কমাতে যোগব্যায়াম, ধ্যান, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস ইত্যাদি করতে হবে।
- নিয়মিত ব্যায়ামঃ নিয়মিত ব্যায়াম করলে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে রক্তনালী গুলো শিথিল হয় এবং রক্তচাপ কমে।
- রক্তচাপ নিয়মিত পরীক্ষা করাঃ নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রক্ত চাপ পরীক্ষা করা উচিত। যত আগে উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়বে তত আগের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এবং জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
প্রেসার বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ কি কি
অনেকেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগে থাকেন। রক্তচাপে স্বাভাবিক মাপ হচ্ছে
১২০\৮০। তবে এটা যদি ১৩০\৮০ এর বেশি হয়ে থাকে তাহলে উচ্চ রক্তচাপ বলে বিবেচনা
করা হয়। উচ্চ রক্তচাপের কারণে শরীরের বিভিন্ন রক্তনালীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।
বিশেষ করে শরীর নিচের অংশে সমস্যা দেখা যায়।এটি একটি নীরব ঘাতক রোগ। প্রেসার
বেড়ে যাওয়ার কিছু লক্ষণ রয়েছে। এগুলো হল--
- মাথা ব্যথা ও ঘাড় ব্যথা
- বুক ব্যথা
- বমি বমি ভাব
- শরীর দুর্বল অনুভব করা
- মাথা ঘোরা
- অল্পতেই হাঁপিয়ে যাওয়া
- ক্লান্তিও
- দুর্বলতা চোখে ঝাপসা দেখা
- অস্থিরতা
প্রেসার লো হলে কি কি খেতে হবে
সুস্থ থাকার জন্য রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখা খুবই জরুরী। মানুষের দেহের রক্তচাপ
স্বাভাবিক রক্তচাপ এর চেয়ে কমে গেলে তাকে লো ব্লাড প্রেসার বলে। মানুষের
দেহে স্বাভাবিক রক্তচাপ ১২০\৮০ মিলিমিটার মার্কারি। এই চাপের মাত্রা যদি ৯০\৬০
মিলিমিটার মার্কারির নিচে চলে আসে তখন তাকে লো ব্লাড প্রেসার বা নিম্ন
রক্তচাপ বলে। আপনি যদি লো প্রেসারে থাকেন তাহলে নিম্নোক্ত খাবারের
মাধ্যমে আপনার প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। লো প্রেসার হলে হলে কি কি
খেতে হবে জেনে নিন--
- খাবার স্যালাইনঃ প্রেসার কমে গেলে প্রথমে খাবার স্যালাইন খেতে হবে । শরীরে পানি শূন্যতা ও ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতার জন্য প্রেসার লো হয়ে যায়। প্রেসার যখন কমে যাবে তখন শুধু খাবার স্যালাইন খেলে প্রেসার বেড়ে যায়। লো প্রেসারে খাবার স্যালাইন সবচেয়ে বেশি উপকারি এবং তৎক্ষণিক ফলদায়ক।
- ফোলেট রয়েছে এমন খাবারঃ শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের পুষ্টি উপাদান। রক্তস্বল্পতা সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এই ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের পুষ্টি উপাদান। সিদ্ধ ডিম, লেবু জাতীয় ফল, শাক, মেটে আলু মসুর ডাল ইত্যাদি হল ফুলের সমৃদ্ধ খাবার। রক্তচাপ কমে যাওয়ার সমস্যা হলে এগুলো তাৎক্ষণিক খেতে পারেন।
- বাদামঃ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। বাদাম ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। রাতে এক মুঠো বাদাম ভিজিয়ে রাখুন। সকালে সেই সেই বাদাম ফুটিয়ে ঠান্ডা করে পিছু নিন। ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক রাখতে এটি খেতে পারেন। যদি হঠাৎ প্রেসার কমে যায় তাহলে এই খাবারটি খেলে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে।
- কিসমিসঃ কিসমিস একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। কিসমিসে রয়েছে সব জরুরী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা প্রদাহ কমায়। কিসমিসে রয়েছে পটাশিয়াম। কিসমিস থাকা পটাশিয়ামের কারণে লো প্রেসার কন্ট্রোলে চলে আসে। অর্থাৎ লো প্রেসার থেকে মুক্তি পেতে অবশ্যই কিসমিস খাওয়া জরুরি। তবে যারা ডায়াবেটিস রোগী রয়েছেন তারা কিসমিস খাওয়ার আগে পরামর্শ নিয়ে খাবেন।
- ডার্ক চকলেটঃ যাদের ব্লাড প্রেসার একদম কমে যায় তারা ডার্ক চকলেট খেতে পারেন। ডার্ক চকলেট রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
- ভিটামিন বি-১২ সমৃদ্ধ খাবারঃ খাদ্য তালিকায় ভিটামিন বি-১২ সমৃদ্ধ খাবার কম থাকে তাহলে শরীরের রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। তা থেকে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। এই সমস্যা দূর করতে ডিম, মুরগির মাংস, দই, গরুর কলিজা স্যামন মাছ ইত্যাদি খাওয়া অনেক উপকারী। কারন এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ভিটামিন বি-১২ । তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এগুলো থেকে অন্তত একটি খাবার রাখার চেষ্টা করুন।
- পানিঃ পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকার। শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলেও পেশার লো হয়ে যায়। তাই বিশেষজ্ঞরা করা প্রতিদিন ২-৩ লিটার পানি পান করার পরামর্শ দেন। শরীরের পানির পরিমাণ ঠিক রাখতে নিয়মিত ডাবের পানি ও লেবুর পানি পান করা উচিত।
লো প্রেসারে কি হার্ট অ্যাটাক হয়
লো প্রেসার নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেকেরই অনেক ধরনের চিন্তাভাবনা আসে। এরকম একটা
প্রশ্ন হলো লো প্রেসারে কি হার্ট অ্যাটাক হয়? শরীরের রক্তচাপ অত্যন্ত কম হলে
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তবে এটি উচ্চ রক্তচাপের মতো সরাসরি কারণ
নয়।
লো প্রেসারের কারণে যদি হৃদযন্ত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ রক্ত এবং অক্সিজেন পৌঁছেতে না
পারে তাহলে হার্টের টিস্যু ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। দীর্ঘ সময় এই অবস্থা চলতে
থাকলে হৃদযন্ত্রের কর্ম ক্ষমতা ব্যাহত হয় এবং হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তবে
বিশেষ করে বয়স্ক, হৃদরোগ আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য লো প্রেসার বিপদজনক হতে
পারে। তাই যাদের লো প্রেসারের সমস্যা আছে তাদের দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
উচিত।
প্রেসার লো হলে ১৭ করনীয় কাজ
প্রেসার লো হলে ১৭ করনীয় কাজ গুলো জেনে নিন--
- একটি হাসির ডিম তাতে অল্প পরিমাণ লবণ মাখিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। বাড়িতে হাঁসের ডিম না থাকলে মুরগির ডিম খেতে পারেন।
- প্রেসার লো হলে খাবার স্যালাইন খেলে দ্রুত প্রেসার বাড়াতে সাহায্য করে। প্রেসার লো হলে স্যালাইন খেলে তৎক্ষণিক উপকার পাওয়া যায়।
- ডাবের পানি ব্লাড প্রেসার বাড়াতে দারুন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই ঝটপট পেশার বাড়াতে ডাবের পানি খেতে পারেন।
- যাদের লো প্রেসারে সমস্যা রয়েছে তারা ডার্ক চকলেট খেতে পারেন। এতে রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে।
- লো প্রেসারে আঙ্গুরের রস দারুন কার্যকরী। যাদের লো প্রেসার আছে তারা আঙ্গুরের রস পান করতে পারেন।
- কফি আপনার ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তবে বেশি কফি খাওয়ার থেকে বিরত থাকেন। কফি বেশি খেলে ডি-হাইড্রেশন হতে পারে
- তুলসী পাতা খেলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে। তুলসী পাতাকে ওষুধে গাছ বলা হয়ে থাকে। লো প্রেসারের সমস্যা থাকলে প্রতিদিন তুলসী পাতা খাওয়ার করুন।
- কমলার রসে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন সি। কমলা রসে উচ্চ ভিটামিন সি রক্তনালীর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এবং সম্ভাব্য রক্তচাপ বাড়াতে পারে।
- বিটরুট নাইট্রিক অক্সাইড সামগ্রীর জন্য পরিচিত। যার রক্তনালীর প্রসারণকে উৎসাহিত করে এবং রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
- টমেটোতে রয়েছে লাইকোপিন। যার রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। লো প্রেসারের সমস্যা থাকলে নিয়মিত টমেটো খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- সবজি বা মাংসের সুপ খেতে পারেন। এইসব খাবার শরীরের রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বাড়াতে পারে।
- লো প্রেসারে গরুর দুধ খেতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন দুধ যেন প্যাকেটের না হয়। খাঁটি গরুর দুধ এক্ষেত্রে খুবই ভালো কাজ করে।
- আলু ভাত রুটি, সাগু এরা রক্তে গ্লুকোজ ও ভলিউম বাড়িয়ে প্রেসার বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
- গরু, মুরগির মাংস, সামুদ্রিক মাছ, ডাল, লাল শাক, পালং শাক, কচু শাক, মিষ্টি কুমড়ার বিচি এগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। এছাড়াও এতে রয়েছে ভালো পরিমাণের সোডিয়াম। লো প্রেসারে খাবারগুলো খেলে অনেক উপকার হয়।
- লো প্রেসার হবার একটি বড় কারণ হচ্ছে ডিহাইড্রেশন। তাই লো প্রেসার বাঁচতে দিনে কমপক্ষে ৮-১০ পানি পান করা উচিত।
- কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, চিনাবাদাম, তিলের বীজ এবং সূর্যমুখী বীজে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও মিনারেল রয়েছে। যার রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে।
- আপনার যদি ঘনঘন লো প্রেসারে সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
লেখকের শেষ মন্তব্য
প্রিয় পাঠক পেশার লো হলে করণীয় ১৭ টি কাজ এবং পেশার লো এর লক্ষণ কি
কি এই সম্পর্কে আপনারা বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। আশা করি আজকের এই
আর্টিকেল পড়ে আপনার অনেক উপকৃত হয়েছেন। যদি আজকে আর্টিকেলটি ভালো লেগে
থাকে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন।
লো প্রেসারের সমস্যা থাকলে অবশ্যই আপনি ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। এতক্ষণ
আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url